পদার্থবিদ্যা - পদার্থবিজ্ঞান – ২য় পত্র - ইয়ং এর দ্বি-চিড় পরীক্ষা

টমাস ইয়ং ১৮০১ সালে তার দ্বি চির পরীক্ষার মাধ্যমে আলোর ব্যতিচার প্রদর্শন করেন। এই পরীক্ষা তরঙ্গ তত্ত্বকে জোরালোভাবে সমর্থন প্রদান করে।

 ৭.৭ চিত্রে ইয়ং-এর পরীক্ষার ব্যবস্থাটি দেখানো হয়েছে। এই পরীক্ষায় তিনি সাদা আলোর উৎস ব্যবহার করেন।

চিত্র : ৭.৭

পরীক্ষা : একটি চির S কাগজের তলের অভিলম্বভাবে রাখা আছে। অপর দুটি চির S1 ও S2 পরস্পরের খুব কাছাকাছি এবং প্রথম চির S এর সমান্তরালে রাখা আছে। S এর ভেতর দিয়ে সাদা সূর্য রশ্মি যেতে দিয়ে PR অবস্থানে একটি পর্দা রেখে তিনি পর্দার ওপর রঙিন ব্যতিচার পট্টি দেখতে পান ।

   সাদা আলোর পরিবর্তে একবর্ণী (monoch- romatic) আলো নিলে পর্যায়ক্রমিকভাবে উজ্জ্বল ও অন্ধকার ডোরা দেখা যায়। S1 ও S2 চিরের যে কোনো একটি বন্ধ করে দিলে আর ব্যতিচার ডোরা দেখা যায় না। এভাবে ইয়ং সর্বপ্রথম পরীক্ষার মাধ্যমে আলোর ব্যতিচার প্রদর্শন করেন এবং আলোর তরঙ্গ প্রকৃতি প্রমাণ করেন।

নিজে কর : একটি অন্ধকার ঘরে ইয়ং-এর পরীক্ষাটি সম্পন্ন কর। সূর্যের আলোর পরিবর্তে সোডিয়াম আলো ব্যবহার করো। একটি সলতেকে লবণগোলা পানিতে ভিজিয়ে শুকিয়ে নাও। এখন এই সলতেটি জ্বালালে একবর্ণী আলো বিকিরণ করবে।

ব্যাখ্যা : হাইগেন্‌সের নীতি ব্যবহার করে ইয়ং-এর দ্বি চির পরীক্ষায় প্রদর্শিত আলোর ব্যতিচার ব্যাখ্যা করা যায়। চিড় S গোলীয় তরঙ্গমুখ প্রেরণ করে। যেহেতু S1 ও S2 চিরের দূরত্ব S থেকে সমান, কাজেই একই তরঙ্গমুখ S1 ও S2-তে এসে পৌঁছায়। এই তরঙ্গমুখের ওপর অবস্থিত S1, ও S2 বিন্দু এখন গৌণ তরঙ্গ নিঃসৃত করে যেগুলো পরস্পরের সাথে একই দশায় থাকে। সুতরাং S1 ও S2 চির থেকে নিঃসৃত গৌণ তরঙ্গসমূহ সুসঙ্গত, কেননা তাদের কম্পাঙ্ক ও বিস্তার একই । এখন S1, ও S2 থেকে নিঃসৃত তরঙ্গ দুটি উপরিপাতিত হয়ে ব্যতিচার ঘটায়। ৭.৭ চিত্রে অভগ্ন রেখাগুলো বরাবর গঠনমূলক ব্যতিচার ঘটে এবং পর্দার ওপর P, O, R প্রভৃতি স্থানে উজ্জ্বল ডোরা দেখা যায়। 

অপরপক্ষে ভগ্ন রেখাগুলো বরাবর ধ্বংসাত্মক ব্যতিচার ঘটে এবং T ও Q বিন্দুতে অন্ধকার ডোরা দেখা যায় ।

দশাপার্থক্য ও পথপার্থক্যের মধ্যে সম্পর্ক

ধরা যাক, λ তরঙ্গদৈর্ঘ্যের একরঙা আলোর দুটি উৎস S1 এবং S2 (চিত্র ৭.৭ ) হতে একই সঙ্গে নির্গত আলোক তরঙ্গ প্রায় একই দিকে c বেগে সঞ্চালিত হয়ে P বিন্দুতে উপরিপাতিত হয়। P বিন্দুতে আলোর তীব্রতা সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন হওয়ার শর্ত নির্ণয় করা যাক।

ধরা যাক, যে কোন t সময়ে P বিন্দুতে আলোক তরঙ্গের সরণ S1 থেকে আগত তরঙ্গের জন্য y1 এবং S2 থেকে আগত তরঙ্গের জন্য y2 হলে,

(ctx1) এবং y1=a sin2π1(ctx1)

এখানে a তরঙ্গের বিস্তার এবং S1 p = x1   S2 P = x2

  P বিন্দুতে S1, ও S2 থেকে আগত তরঙ্গের দশাকোণ যথাক্রমে  এবং   বিন্দুতে তরঙ্গদ্বয়ের

দশা পার্থক্য, δ=2π1(ctx1)2π1(ctx2)=2π1(x2x1)=2π1(πS2πS1)

অতএব, দশা পার্থক্য =  পথ পার্থক্য

গঠনমূলক ব্যতিচার সৃষ্টির শর্ত :

দুটি তরঙ্গ যখন একই দশায় মিলিত হয় তখন লব্ধি তরঙ্গের বিস্তার তথা প্রাবল্য সর্বাধিক হয় ফলে উজ্জ্বল ডোরার সৃষ্টি হয় বা গঠনমূলক ব্যতিচার ঘটে। অর্থাৎ গঠনমূলক ব্যতিচার সৃষ্টি হবে যখন,

দশা পার্থক্য, δ = 0, 2, 4, 6n....... ইত্যাদি π   -এর যুগ্ম গুণিতক।

=2πn,   যেখানে n= 0,1,2,3,4,…..

বা, পথ পার্থক্য, PS2- PS1 =nλ =2n λ2…(7.8)

যেখানে, n = 0, 1, 2, 3 ইত্যাদি।

সুতরাং এই ক্ষেত্রে গঠনমূলক ব্যতিচারের জন্য আমরা পাই,

আলোকীয় পথ পার্থক্য =nλ

PS2- PS1 =nλ…(7.9)

 সুতরাং O বিন্দুতে একটি উজ্জ্বল ডোরা সৃষ্টি হয়। এটিকে অনেক সময় কেন্দ্রীয় চরম (Central maximum ) বলা হয়।   

  O থেকে প্রথম উজ্জ্বল ডোরাটি পাওয়া যাবে P তে যেখানে n = 1 এবং পথ পার্থক্য = PS2 - PS11×λ

সুতরাং (7.9) সমীকরণের অখণ্ড পূর্ণ সংখ্যা n আসলে কেন্দ্র বা মধ্যস্থল থেকে n তম উজ্জ্বল ডোরা নির্দেশ করে।

   সুতরাং দেখা যায় যে, পর্দার ওপর যে বিন্দুতে উভয় চির থেকে আগত তরঙ্গ দুটির পথপার্থক্য 1 টি তরঙ্গদৈর্ঘ্যের (λ.) সমান হয়, সে বিন্দুতে একটি উজ্জ্বল ডোরা পাওয়া যায় এবং মধ্যস্থল থেকে গণনা করলে সেটি হবে ১ম উজ্জ্বল ডোরা। অনুরূপভাবে যে বিন্দুতে পথপার্থক্য ২টি তরঙ্গদৈর্ঘ্যের সমান হয় সেই বিন্দুতে আরেকটি উজ্জ্বল ডোরা পাওয়া যায় এবং মধ্যস্থল থেকে গণনা করলে সেটি হবে ২য় উজ্জ্বল ডোরা। 

ধ্বংসাত্মক ব্যতিচার সৃষ্টির শর্ত :

যখন ধ্বংসাত্মক ব্যতিচার ঘটে, তখন অন্ধকার ডোরা পাওয়া যায় এবং সাধারণভাবে সেটা ঘটে যখন তরঙ্গ দুটি বিপরীত দশায় মিলিত হয় অর্থাৎ যখন দশা পার্থক্য δ = π, 3π, 5π, 7π ....... ইত্যাদি π-এর অযুগ্ম গুণিতক = ( 2n + 1), যেখানে n = 0, 1, 2, 3 ইত্যাদি।

পাশাপাশি ডোরার ব্যবধান ও ডোরা গ্রন্থ

(Separation between two Consecutive fringes and fringe width) 

  দেখা গেছে, দুটি ডোরার মধ্যবর্তী দূরত্ব x নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর ওপর নির্ভর করে-

(১) ব্যবহৃত তরঙ্গের তরঙ্গদৈর্ঘ্য, (λ.; 

(২) দ্বি-চির থেকে পর্দার দূরত্ব D 

(৩) চির দুটির মধ্যবর্তী দূরত্ব, al

আমরা এখন ডোরার মধ্যবর্তী ব্যবধানের সাথে এদের সম্পর্ক স্থাপন করব।

 ধরা যাক ৭.৮ চিত্রে O থেকে তথা কেন্দ্রীয় চরম থেকে n তম উজ্জ্বল ডোরাটির অবস্থান হচ্ছে P 10 থেকে P তথা n তম উজ্জ্বল ডোরার দূরত্ব xn। যেহেতু এই সকল দূরত্ব খুবই ক্ষুদ্র, তাই 1, PS2 কোণগুলোও ছোট হবে।

B হচ্ছে S2P এর ওপর একটি বিন্দু যেখানে S1P = BP হয়।

চিত্র :৭.৮

যেহেতু D এর তুলনায় a এবং x খুবই ক্ষুদ্র, তাই PSB সমদ্বিবাহু ত্রিভুজের সমান কোণ দুটিকে প্রায় 90° ধরা যায় । সুতরাং  2 প্রায় 90° । এ ছাড়াও 1, S2 = θ l P বিন্দুতে S1 ও S2 চির থেকে নির্গত আলোক তরঙ্গ দুটির পথ পার্থক্য হবে,

পথ পার্থক্য = PS2 - PS1

 = PS2 - PB (PB = PS 1 ) = S2 B

এখন S, BS, ত্রিভুজে

পরীক্ষার ফলাফল

১। দ্বি-চির পরীক্ষা থেকে দেখা যায় আলোর ব্যতিচার ঘটে।

২। যেহেতু ব্যতিচার ঘটে তরঙ্গের, কাজেই আলো এক প্রকার তরঙ্গ। অর্থাৎ ইয়ং এর দ্বি চির পরীক্ষা আলোর তরঙ্গ তত্ত্বকে সমর্থন করে।

Content added || updated By